মোঃ নাসির উদ্দিন গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ১০০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি দীর্ঘদিন যাবত চিকিৎসক সংকট ভুগছে। বর্তমানে চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে।
সরকারি এই হাসপাতালটিতে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সংকটও রয়েছে । চতুর্থ শ্রেণির পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মচারী ৫ জনের মধ্যে ৩ জনই নেই। মাত্র ২ জন কর্মচারী দ্বারা কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চালানো হচ্ছে । এ অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগী।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানাযায়,
এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ২৩ জন কর্মরত রয়েছেন। বাকি ৮ জন চিকিৎসক দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন হাসপাতালে ডেপুটেশনে আছেন ।
বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে এসব চিকিৎসকগণ নিজ নিজ সুবিধামতো হাসপাতালে ডেপুটেশন নিয়েছেন বলে একটি সূত্র জানায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানাযায়, কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো মেডিসিন। এ বিভাগের রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট হলেন ডা: মো: মিজানুর রহমান। তিনি জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার আন্দোলনের অনেক আগ থেকেই ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি করোনা হাসপাতালে ডেপুটেশনে রয়েছেন।
তাছাড়া কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা: মাকসুদা রয়েছেন গাজীপুর জেলা কারাগার হাসপাতালে। ডা: সোহেল রানা ও ডা: জহিরুল ইসলাম ডেপুটেশনে রয়েছেন কাশিমপুর কারাগার হাসপাতালে।
ঢাকার কর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ডেপুটেশনে আছেন ডা: আমিনা বেগম, টঙ্গী জেনারেল হাসপাতালে ডেপুটেশন নিয়েছেন ডা: আফরোজা আক্তার। কাপাসিয়া সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: ইমরান হোসেন আছেন গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এবং ডা: ফারিয়াল মান্নান বর্তমানে ডেপুটেশনে আছেন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: হাবিবুর রহমান জানান, কাপাসিয়া উপজেলায় ৪ লাখের অধিক মানুষের বসবাস। প্রতিদিন বহি: বিভাগে ৮০০ থেকে ১০০০ জন রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। বিশেষ করে রবিবার রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। রবিবারে ১২০০ থেকে ১৩০০ রোগি চিকিৎসা নিতে আসে। আশপাশের শ্রীপুর, মনোহরদী, কালীগঞ্জ সহ কোন উপজেলায়ই কাপাসিয়া সরকারি হাসপাতালের মতো এত রোগী চিকিৎসা নিতে কখনো আসেনা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: হাবিবুর রহমান আরো জানান, আমাদের এ হাসপাতালে বর্তমানে নাক, কান,গলা,চক্ষু, অর্থপেডিক্সের কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। একসময় কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নাক, কান,গলা,চক্ষু, অর্থপেডিক্স, মেডিসিন সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলো। তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিকিৎসক ও কর্চারির চাহিদা প্রেরণা করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পোস্টিং হয়নি।
তরগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু সায়িদ বলেন,
হাসপাতালে পদ আছে কিন্তু ডাক্তার নেই। পদ আছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নেই। ডাক্তার ছাড়া কোন হাসপাতাল চলতে পারেনা। দীর্ঘদিন কোন চিকিৎসককে তাঁর সুবিধাজনক জায়গায় ডেপুটেশন দেয়া কাপাসিয়া উপজেলার সাধারণ মানুষের সাথে একধরনের প্রহসনের সামিল। তিনি অবিলম্বে এসব ডেপুটেশন বাতিল করে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের যোগদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব দীর্ঘদিনের। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ডেপুটেশনের মাধ্যমে জনগণের চিকিৎসা সেবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ঘটনাও অহরহ । ডেপুটেশন দিয়ে চিকিৎসক সংকট তৈরির পাশাপাশি এখানে কর্মরত কোন কোন চিকিৎসক আবার নিয়মিত হাসপাতালে আসেননা বলেও মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে।
চিকিৎসক সংকট,অনুপস্থিতি ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর অভাবে জনগণের কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবাও ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।