নজমুল হক স্টাফ রিপোর্টার গাজীপুর
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী (৬০) নিজেই নিজের অপহরণের নাটক সাজানোর কথা স্বীকার করেছেন। তিনি প্রথমে অপহরণের শিকার হয়েছেন মর্মে মামলা দায়ের করলেও, পুলিশের নিবিড় তদন্ত এবং প্রযুক্তির সহায়তায় সেই রহস্যের উদঘাটন হয়। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) জিএমপি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান।
মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী, যিনি সামাজিক মাধ্যমে মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মাদানী নামেও পরিচিত, পঞ্চগড়ে ‘উদ্ধার’ হওয়ার পর টঙ্গী থানায় এসে নিজেই বাদী হয়ে অপহরণের মামলা দায়ের করেন।
এজাহারে তিনি দাবি করেছিলেন, গত ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে টঙ্গীর শিলমুন এক্সিস লিংক সিএনজি ফিলিং অ্যান্ড কনভার্সন সেন্টারের সামনে থেকে ৪-৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে চোখ বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং টানা একদিন-একরাত চলার পর তাঁকে পঞ্চগড়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় এবং পরে ‘৯৯৯’ এ ফোন পেয়ে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, মামলার তদন্তকারী দল সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নেয়। তদন্তে দেখা যায়:অপহরণের প্রমাণ নেই: এজাহারে উল্লেখিত সময়ে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে কোনো অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল বা অপহরণের দৃশ্য দেখা যায়নি।
২২ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে ভিকটিমকে ঢাকার সোবহানবাগ সংলগ্ন প্লাজা এ.আর-এর পাশে দেখা যায়।
বাসে পঞ্চগড় যাত্রা: তিনি নিজেই দুপুর ২টার দিকে গাবতলী শ্যামলী কাউন্টার থেকে শ্যামলী পরিবহন-এর একটি বাসের (রেজিঃ নং-ঢাকা মেট্রোঃ ব-১৪-৪৩২৬, সিট-ই-১) টিকেট কেটে ঢাকার গাবতলী থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হন। যাত্রাপথে বগুড়ার শেরপুর থানাধীন পেন্টাগন হোটেলে তাঁকে নামাজ পড়ে দ্রুত বাসে উঠতে দেখা যায়, যা হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পাওয়া যায়।
সকল তথ্য-প্রমাণ ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখার পর মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী পুলিশের কাছে স্বীকার করেন যে, অপহরণের ঘটনাটি তিনি নিজেই সাজিয়েছিলেন। তিনি জানান, হাঁটতে বের হয়ে হঠাৎ তাঁর মনে হয় তিনি চলতে থাকবেন, কোনো গন্তব্য ছাড়াই।
“অনেক রাতে পঞ্চগড় নামছি। নামার পরে হাঁটতেছিলাম, কোন দিকে হাঁটতেছি আমি জানি না চিনি না… এক পর্যায়ে আমি দেখি যে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ লাইনস এগুলো হেঁটে পার হয়ে গেছি। পার হয়ে গিয়ে আমি একটা শিকল কুড়িয়ে পাইলাম। ওইটা নিয়ে আমি এক জায়গায় প্রস্রাব করতে বসলাম। প্রস্রাব করলাম আর পায়জামায় প্রস্রাব লাগল, এর পরে জামায়ও লাগল। জামা খুইলা ফালাইলাম, পায়জামাও খুললাম। কিন্তু খোলার পরে আবার পরতে হবে এই জিনিসটা আমি আর পারি নাই ঠাণ্ডায়। ঠাণ্ডায় ওইখানে শুইয়া পড়লাম আর পায়ে শিকল দিলাম। এইটা কেন করতেছি এইটার কোনো চিন্তাভাবনা আমার নেই, খালি যা মাথায় আসতেছে তা করতেছি।”
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তাহেরুল হক চৌহান আরও জানান, অপহরণের নাটক সাজানোর কারণ বা এর পেছনে অন্য কারও জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্ত চলছে। মঙ্গলবার অপহরণ মামলার ভিকটিম হিসাবে তাঁকে আদালতে তোলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।