শেখ মোঃ হুমায়ুন কবির নিজস্ব প্রতিবেদক
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে গিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির জেরে প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন র্যাব-১-এর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (তারিখ উল্লেখ নেই, তবে ঘটনার দিন) দুপুরে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা এলাকার আল হেরা হাসপাতালের পাশে এই ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অবরুদ্ধ র্যাব সদস্যদের উদ্ধার করে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে র্যাব-১-এর একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত বিএসটিআই প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে মাওনা চৌরাস্তা এলাকার আল হেরা হাসপাতালের পাশে মো. মারুফের মালিকানাধীন বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ এবং মো. সোহেল রানার মালিকানাধীন একটি কসমেটিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়।
অভিযান চলাকালে র্যাব দল অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠান দুটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে এবং বিপুল পরিমাণ পণ্য জব্দ করে।
তবে, অভিযানে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল কোনো তালিকা ছাড়াই নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ব্যবসায়ীরা অভিযানে থাকা দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে “অন্যায্য আচরণ ও পণ্য দখলের” অভিযোগ তোলেন। এক পর্যায়ে আশপাশের ব্যবসায়ীরা একত্র হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন, র্যাবের গাড়ি ঘিরে ফেলেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন।
বিকাল ৩টার দিকে পুলিশ র্যাব সদস্যদের নিরাপদে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. মারুফ অভিযোগ করেন, “তারা দোকানে ঢুকেই কথা না শুনে একের পর এক মালামাল জব্দ করেন। এমনকি বৈধ কসমেটিক পণ্যের কাগজপত্র দেখালেও তারা মানেননি। আমি জানি, ওই দলে একজন এমন ব্যক্তি ছিলেন যিনি আগে আমাদের কাছে নিজের পণ্য রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমরা না বলায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আজকের অভিযানে উস্কানি দেন।” ইউনিলিভারের প্রতিনিধি মো. মিজানুর রহমানও বৈধ পণ্যের কাগজপত্র না দেখে জব্দ করার প্রতিবাদ জানান।
দুপুর পৌনে তিনটার দিকে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারিক অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি র্যাব ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। অবরুদ্ধের সময় মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কের একপাশে র্যাবের দুটি গাড়ির চারপাশে শতাধিক ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
এ বিষয়ে গাজীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (কালিয়াকৈর সার্কেল) মো. মেরাজুল ইসলাম জানান, “র্যাব সদস্যরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়। বিশেষ করে অভিযানে দুজন সিভিল পোশাকের ব্যক্তি উপস্থিত থাকায় সন্দেহ তৈরি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে র্যাব সদস্যদের মুক্ত করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, অভিযানে থাকা সিভিল পোশাকের দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে র্যাব-১ এর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট নাফিজ বিন জামাল এর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অভিযান ও অবরোধের এই ঘটনায় দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। স্থানীয়রা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় প্রশাসনের অভিযানের সংখ্যা বাড়লেও ব্যবসায়ীরা “অভিযানের নামে হয়রানি নয়, ন্যায়বিচার” দাবি করছেন।