মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
শিরোনাম
হারাগাছ মেট্রো পুলিশের অভিযানে জুয়ার সরঞ্জামসহ গ্ৰেফতার ৫  ভেড়ামারায় পাটবীজ উৎপাদনকারী চাষীদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত  কালীগঞ্জে বিএনপির পথসভা ও বর্ণাঢ্য মিছিল অনুষ্ঠিত ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার রায়ে আবু সাঈদের পরিবার সন্তুষ্ট মোংলায় কোডেক’র শিশুদের অংশগ্রহণ বিষয়ক সমন্বয় সভা কালিয়াকৈরে পৃথক স্থানে ককটেল ও পেট্রোল বোমা বিস্ফোরণ  সৌদিতে বাস–ট্যাঙ্কার সংঘর্ষ, ৪২  ওমরাহযাত্রী নিহত বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের ৫৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত রফিকুল ইসলাম রাতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার সমর্থকদের মধ্যে আনন্দ উল্লাস শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে গাজীপুরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

তথ্য সন্ত্রাস প্রতিরোধে আমাদের করণীয়  

অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন / ১৪৫ টাইম ভিউ
আপডেট : সোমবার, জুন ২৩, ২০২৫, ১১:২১ অপরাহ্ণ

অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন

 

বর্তমান বিশ্বে প্রতিটি দেশে বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে তথ্য সন্ত্রাস শব্দটি বহুল আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় সংঘ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, নিরীহ জনগণ। এমনকি দেশ ও জাতি পর্যন্ত আধিপত্যবাদী শক্তির নানা ধরনের তথ্য সন্ত্রাসের শিকার।

 

তথ্য সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনা করার আগে আসলে তথ্য সন্ত্রাস কী এ বিষয় নিয়ে স্পষ্ট ধারণা লাভ করা দরকার। “তথ্য সন্ত্রাস” শব্দটি সাধারণত “সাইবার সন্ত্রাস” বা “তথ্য যুদ্ধ” এর একটি অংশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য সন্ত্রাস বা ভীতি সৃষ্টি করা হয়। এর মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, বা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর উপর সাইবার হামলা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

আরও বিস্তারিতভাবে, তথ্য সন্ত্রাস বলতে বোঝায় মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো। সামাজিক মাধ্যম বা অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রচার করা, যা জনগণের মধ্যে ভয়, ঘৃণা, বা বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করা, ডেটা চুরি করা, বা সিস্টেমগুলিকে অকার্যকর করে দেওয়া, যা জনজীবনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

 

তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করার জন্য ইন্টারনেটে মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত তথ্য প্রচার করা হয় । তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। একটি বিশেষ গোষ্ঠী অনলাইনে হুমকি বা উস্কানিমূলক বার্তা ছড়িয়ে জনমনে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায়।

 

তথ্য সন্ত্রাস একটি জটিল সমস্যা, যা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মোকাবিলা করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা জোরদার করা, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম,প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহার করে তথ্য সন্ত্রাস সৃষ্টি করার নজির নতুন নয় এটা হচ্ছে অহরহ। তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হয়ে বহু ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান যে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তা পরবর্তীতে কখনো পূরণ করা সম্ভব হয়না।

 

বিখ্যাত আরবি কবি ইয়াকুব হামাদানী বলেছেন— “তলোয়ারের আঘাত সেরে যায়, কিন্তু জিহ্বার আঘাত কখনো সারে না।” ভাষা অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার। এর মাধ্যমে যেমন মানুষের মন জয় করা যায়, তেমনি কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করাও সম্ভব। ইতিহাস সাক্ষী, প্রাচীনকাল থেকেই সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে শত্রুর বিরূদ্ধে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এই অপপ্রচারের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গেছে। এখন মতামত প্রকাশ বা প্রচারের জন্য বড় কোনো কবি-সাহিত্যিক হওয়ার দরকার হয় না; একটিমাত্র স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই মুহূর্তের মধ্যে সত্য-মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উন্মুক্ত পরিবেশে সত্য-মিথ্যার যাচাই ছাড়াই যে কেউ যে কোনো তথ্য প্রচার করতে পারে। বিশেষ মহল এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাদাকে কালো আর কালোকে সাদা বানিয়ে তুলতে উঠে-পড়ে লেগেছে।

সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে ইসলামপ্রিয় ব্যক্তিবর্গ বিশেষ করে আলেম-ওলামা ও ইসলামী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিল সবচেয়ে বেশি । বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে ইসলামি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হয়েছে। গুম, খুন ও নির্যাতনের পাশাপাশি চালানো হয়েছে তথ্য সন্ত্রাস।মাদ্রাসার ছাত্র ও আলেম ওলামাদের ‘জঙ্গি’ হিসেবে দেশ ও বিদেশে উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব অপপ্রচারের ফলে অনেক সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।

এ সন্ত্রাস বিশেষ করে ইসলাম, ইসলাম প্রিয় মানুষ ও ইসলামি সংঘঠনের জন্য এক গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ বলে মানুষ মনে করে। ইসলাম যাচাই-বাছাই ছাড়াই তথ্য প্রচারকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,“কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তা যাচাই-বাছাই না করেই প্রচার করে।” (মুসলিম) ,পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,“তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন করো না।” (সূরা আল-বাকারা)

এছাড়াও, সূরা আল-হুজুরাতে বলা হয়েছে,“হে ঈমানদারগণ, যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোন কওমের ক্ষতি করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।” (আল-হুজুরাত)

 

তথ্য সন্ত্রাস প্রতিরোধ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলেও অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে রাষ্ট্রই যেনো কোন বিশেষ মহলকে খুশি করতে তথ্য সন্ত্রাসকে উসকে দিচ্ছে।

আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো, ইসলামি নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই যেনো সবচেয়ে বেশি অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তথ্য সন্ত্রাস প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে এবং এর বিরূদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

এ ব্যাপারে করণীয় হলো, অভিজ্ঞ লোক দিয়ে ফ্যাক্ট-চেকিং টিম গঠন করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্য যাচাই করতে একটি শক্তিশালী টেকনিক্যাল টিম গঠন করা।

 

যেকোনো অপপ্রচার বা মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে যে, যাচাই ছাড়া কোনো সংবাদ প্রচার করা, শেয়ার করা, সমর্থন করা, বিশ্বাস করা ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক নয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম,রেডিও, টেলিভিশন, পেপার, পত্রিকায় সৎ ও আদর্শবাদী লোকজনের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের জন্য নীতিবান মানুষকে এ সাংবাদিকতা পেশায় আসতে হবে। আলোকিত মানুষগুলো মিডিয়ার জগতে আসলে অন্ধকার আস্তে আস্তে দূরীভূত হয়ে যাবে।

 

তথ্য সন্ত্রাস শুধু একটি গোষ্ঠীর সমস্যা নয়; এটি পুরো সমাজের জন্য হুমকি। তাই সকলকে সচেতন হতে হবে। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়, সত্য-মিথ্যা যাচাই করা, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা এবং অন্যায় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। তাই যে কোন তথ্য বা সংবাদ দেখার পর সঠিকভাবে সেসব তথ্য যাচাই করতে হবে।

 

গুজব প্রতিরোধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। যারা মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য ছড়ায় তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। যে সব মিডিয়া তথ্য সন্ত্রাস বিস্তারে জড়িত সে সব মিডিয়া বর্জন করতে হবে। হলুদ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে হবে।

ইসলামি মূল্যবোধ, আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে তথ্য সন্ত্রাস এমনিতেই কমে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

 

লেখক : অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন

সভাপতি, গাজীপুর জেলা সাংবাদিক ফোরাম

সাধারণ সম্পাদক, কাপাসিয়া প্রেসক্লাব

২৩/৬/২৫


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর