মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
শিরোনাম
হারাগাছ মেট্রো পুলিশের অভিযানে জুয়ার সরঞ্জামসহ গ্ৰেফতার ৫  ভেড়ামারায় পাটবীজ উৎপাদনকারী চাষীদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত  কালীগঞ্জে বিএনপির পথসভা ও বর্ণাঢ্য মিছিল অনুষ্ঠিত ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার রায়ে আবু সাঈদের পরিবার সন্তুষ্ট মোংলায় কোডেক’র শিশুদের অংশগ্রহণ বিষয়ক সমন্বয় সভা কালিয়াকৈরে পৃথক স্থানে ককটেল ও পেট্রোল বোমা বিস্ফোরণ  সৌদিতে বাস–ট্যাঙ্কার সংঘর্ষ, ৪২  ওমরাহযাত্রী নিহত বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের ৫৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত রফিকুল ইসলাম রাতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার সমর্থকদের মধ্যে আনন্দ উল্লাস শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে গাজীপুরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

মধ্যনগরে সুমেশ্বরী ও গোমাই নদী ভরাট হচ্ছে বছরে ৩৫ লাখ মণ ধান রপ্তানিতে ভোগান্তি

রিপোর্টারের নাম / ৩০৪ টাইম ভিউ
আপডেট : শনিবার, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩, ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

অনুপ তালুকদার হাওর অঞ্চলের প্রতিনিধি :

 

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সুমেশ্বরী ও গোমাই নদীতে প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বালু ও পলি জমে। এতে নাব্যতা হারিয়ে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদীতে জেগে উঠেছে চর। সেই চর দিয়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছে মানুষ।

এদিকে এই উপজেলার সঙ্গে জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় যুগ যুগ ধরে নদীপথই ভরসা। এখন নদী ভরাট হওয়ায় ধান চাল পরিবহন করতে অসুবিধা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এ কারণে ব্যবসায়ী ও কৃষকের লোকসানে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুমেশ্বরী নদী নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থেকে উৎপত্তি। দুর্গাপুর থেকে একটি শাখা বারহাট্টা উপজেলার ঠাকুরাকোনা হয়ে আটপাড়া উপজেলার দিকে চলে গেছে। বারহাট্টা উপজেলার ঠাকুরাকোনার তাইত্তর নামক স্থান থেকে একটি শাখা কংস নাম ধারণ করে যাত্রাবাড়ী থেকে মোহনগঞ্জ-ধর্মপাশা হয়ে সুখাইড় রাজাপুরের পাশ দিয়ে গাগলাজোড় বাজারের কাছে ধনু নদীতে সংযুক্ত হয়েছে। আর একটি শাখা নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা বাজারের পাশ দিয়ে গলহা, নিয়ামতপুর, কেশবপুর উবধাখালী নাম ধারণ করে গোরাডুবা হাওরের মাঝ সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে মধ্যনগর বাজারের পাশে গোমাই নদীতে সংযুক্ত হয়েছে।

 

গোমাই নদী বারহাট্টা উপজেলার যাত্রাবাড়ী বাজারের কাছে কংস নদী থেকে একটি শাখা নদী মধ্যনগরে উবধাখালীতে যুক্ত হয়েছে। উবধাখালী নদী মধ্যনগর থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে কাইতকান্দার পাশে মূল সুমেশ্বরী নদীতে যুক্ত হয়ে পূর্বদিকে দুগনই আবিদনগরের পাশ ঘেঁষে তেলিগাঁও সরস্বতীপুর হয়ে শানবাড়িতে উত্তর দিক থেকে আসা পাটলাই নদীর প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। পরে এই নদী গোলকপুরের দক্ষিণে, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ আসা সুরমার প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দক্ষিণে ধনু নদীতে পড়েছে। এই ধনু নদী সুনামগঞ্জের জেলার মূল প্রবাহ মেঘনাতে মিলিত হয়েছে।

 

আর এই সুমেশ্বরী ও গোমাই নদী নাব্যতা হারানোর ফলে শুষ্ক মৌসুমে নদীর অনেক অংশই শুকিয়ে যায়। এতে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয় নিচু অঞ্চল। গোমাই নদী যখন সচল ছিল তখন এ রকম পরিস্থিতির তৈরি হতো না।

 

পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহজাহান খান নয়ন বলেন, আমাদের এই নদী খনন হলে এলাকার মানুষের অনেক ভালো হবে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় কারণে এলাকার চাষিদের জমিতে পানি দিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় বাঁধ ভেঙে জমি তলিয়েও যায়।

 

মধ্যনগর বাজার ধান-চাল আড়ত কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জহিরুল হক বলেন, মধ্যনগর বাজার থেকে প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মণ ধান বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি হয়। আমাদের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই ধানগুলো সংগ্রহ করা হয়। নদীতে পানি না থাকার কারণে কম দামে বিক্রি করতে হয়। নদী খনন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি। আমরা সুমেশ্বরী নদীর শানবাড়ি থেকে মধ্যনগর হয়ে কলমাকান্দা পর্যন্ত অচিরেই খনন চাই।

 

মধ্যনগর থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ন আহবায়ক মো, মোবারক হোসেন তালুকদার বলেন, আমাদের পূর্ব উত্তরের পাহাড়ে বৃষ্টি হলে নদী দিয়ে নিচে নামে। নদী ভরাট হওয়ার ফলে মেঘালয় থেকে নামা পানি বাঁধার সম্মুখীন হয়। যেখানে সম্মুখীন হয় সেখান থেকে ফুলতে থাকে। এ কারণেই হাওর ডুবে যায়। তিনি বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরা বলেছে এই গোমাই নদী যখন সচল ছিল উত্তরের পানি কংস নদীতে সহজেই চলে যেত। এই পানি কংস হয়ে গাগলা জুড়ি হয়ে নিচে নেমে যেত। এভাবেই আমাদের হাওরগুলো নিরাপদ থাকত। কৃষি প্রাণ-বৈচিত্র্যের অনন্য জনপদ হাওরাঞ্চল। এখানে প্রাকৃতিক সম্পদ পরিপূর্ণ। এই হাওরাঞ্চলের সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। এই কৃষির প্রাণ বৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে হলে নদীকে রক্ষা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই নদীগুলো গারো ও মেঘালয় পাহাড় থেকে বয়ে একদম সাগরে মিশেছে। নদীর প্রবাহ কমছে কারণ এর নাব্যতা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য দায়ী অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ, সড়ক পথ নির্মাণ। এগুলো খুব পরিকল্পনা করে করতে হবে। নদী না বাঁচলে হাওর বাঁচবে না। আর হাওর না বাঁচলে প্রকৃতি, সংস্কৃতি, মিঠাপানি, মাছের স্বর্গ রাজ্য নষ্ট হয়ে যাবে। তাই নদী খনন জরুরি। তিনি বলেন, নদীকে নদী হিসেবেই খনন করতে হবে। আমরা সম্প্রতি দেখেছি নদীকে খাল হিসেবে খনন করা হচ্ছে। এটা করা যাবে না। নদীতে যে সেতু তৈরি করব, সেগুলো কী নদীর নাব্যতাকে বাঁধাগ্রস্ত করবে সেগুলো খতিয়ে দেখতে হবে।

 

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, সুনামগঞ্জে ১৪টি নদী পুনর্খনন করা হবে। প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই নদীগুলো খনন করা হলে সুনামগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার আগাম বন্যা থেকে রক্ষা পাবে। তবে খুব তাড়াতাড়ি প্রস্তাবিত এই নদীগুলো খনন করা সম্ভব হবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর