নজমুল হক স্টাফ রিপোর্টার গাজীপুর
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এ বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দিবসটি উপলক্ষ্যে সূর্যোদয়ের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়ের বাসভবন, প্রশাসনিক ভবন ও হলসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচী শুরু হয়। সকাল ০৯:০০ ঘটিকায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে উপাচার্য মহোদয়ের নেতৃত্বে একটি বিজয় র্যালি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই গণঅভ্যুত্থান কর্নারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আরেফিন কাওসার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহা. আবু তৈয়ব। আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. খসরু মিয়া। এ সময় বিভিন্ন অনুষদের ডীন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক, হল প্রভোস্ট, অফিস প্রধানগণ এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন সকলকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘১৯৭১ সালের এই দিনটি ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে এইদিনে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন। এই বিজয় বিশ্ব ইতিহাসে সাহস, ত্যাগ ও অদম্য চেতনার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে। সময়ের পরিক্রমায় আমরা আবারও দেখেছি- দেশের ছাত্র-জনতা জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ঐতিহাসিক ঐক্যের মাধ্যমে আরেকটি সাহসী উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এই ঐক্যই প্রমাণ করে দিয়েছে, আমরা যদি একতাবদ্ধ থাকি, তবে পৃথিবীর কোনো শক্তিই আমাদের পরাজিত করতে পারবে না।’উপাচার্য বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত ছাত্র-জনতার ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের ওপর যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তা আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা, ত্যাগ ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে পালন করব। আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ববোধ ও কর্মের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশকে বৈষম্যমুক্ত, উন্নত, কল্যাণকর ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে।’ এ সময় তিনি সকল শহিদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত ও পূর্ণ সুস্থতা প্রার্থনা করেন। তিনি একতাবদ্ধ হয়ে মেধাভিত্তিক, ন্যায়সংগত ও বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলার দৃঢ় শপথ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা, গবেষণা ও জ্ঞান সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় ডুয়েটকে আরও গতিশীল ও অগ্রসর করার ক্ষেত্রে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আরেফিন কাওসার সকলকে মহান বিজয় দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত ছাত্র-জনতার ত্যাগ আমাদের জন্য এক চিরন্তন অনুপ্রেরণা। এই ত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে সকল ভেদাভেদ ভুলে দেশ ও জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের ভেতর ও বাহিরের সকল ষড়যন্ত্র দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করে একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যেতে হবে।’
মহান বিজয় দিবসের অন্যান্য কর্মসূচীর মধ্যে ছিল বা’দ যোহর জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে বিশেষ মোনাজাত, মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা, প্রীতি ভলিবল প্রতিযোগিতা। উল্লেখ্য, বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সেজেছে বর্ণিল আলোকসজ্জায়।