শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পর অবশেষে দৃশ্যমান হয়েছে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ২৪ এর আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত মেয়র বরখাস্তের পর থেকে পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ব্যারিস্টার সজিব আহমেদের নেতৃত্বে মাত্র এক বছরেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই পৌরসভা। বর্তমানে পৌর এলাকার চারপাশজুড়ে চলছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ।
পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ দুই যুগ ধরে মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আনিছুর রহমান। নাগরিক সেবা বঞ্চনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তার মেয়াদকালেই শ্রীপুর পৌরসভা পরিণত হয়েছিল দুর্নীতির আঁতুরঘরে। শিল্পনগরী হিসেবে প্রচুর রাজস্ব আদায় হলেও তা কাগুজে উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ ছিল। ফাইলপত্রে উন্নয়নের গল্প থাকলেও বাস্তবে পৌরবাসী ছিল অবহেলিত।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের শ্রীপুর পৌরসভায় মোট সড়কের দৈর্ঘ্য ১৭৮ কিলোমিটার, যার অধিকাংশই আগে ছিল বেহাল অবস্থায়।
২০০০ সালে ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করা শ্রীপুর ২০১৫ সালে উন্নীত হয় ‘ক’ শ্রেণি বা প্রথম শ্রেণির পৌরসভায়।
প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যারিস্টার সজিব আহমেদ প্রথমেই ভুয়া বিল ও ভাউচার বন্ধ করে পৌরসভার আর্থিক সচ্ছতা নিশ্চিত করেন। নিজস্ব আয়ে পূর্বের মেয়রের রেখে যাওয়া দেনা পরিশোধের পাশাপাশি প্রায় ১২ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করে শুরু হয় নতুন উন্নয়ন কার্যক্রম।
গত এক বছরে পৌরসভায় প্রায় ২০ কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক, ১২ কিলোমিটার সলিং রাস্তা, ২ কিলোমিটার এইচবিবি সলিং রাস্তা, ২ কিলোমিটার আরসিসি রাস্তা এবং ২ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি ৪০০টিরও বেশি স্ট্রিটলাইট স্থাপনের মাধ্যমে পুরো পৌর এলাকা এখন আলোকিত। দীর্ঘদিনের বেহাল পৌর শহরটি যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
শ্রীপুর মিজানুর রহমান খান মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমান ইকবাল বলেন, “একজন রাজনীতিবিদ দুই যুগে যা করতে পারেননি, একজন সরকারি কর্মকর্তা এক বছরেই তা করে দেখিয়েছেন। আমলারা যদি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন, তবে দেশ ও এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।”
শ্রীপুর পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ব্যারিস্টার সজিব আহমেদ বলেন,
“আমি পৌরবাসীর সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এর সুফলও তারা পাচ্ছেন। তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিদিন টন টন বর্জ্য উৎপন্ন হলেও বন বিভাগের অনুমতি না পাওয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্লান্টে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করা যাচ্ছে না।সাময়িকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণে বন বিভাগের জমি ৯০ দিনের জন্য ব্যবহারের অনুমতি প্রার্থনা করে সচিব বন বিভাগ বরাবর পত্র দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় এই সাময়িক ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে পৌর ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র চালুর মাধ্যমে আমরা পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মৌলিক পরিবর্তন আশা করছি। আগামী ২ মাসের মধ্যে এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যাবে